সারা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেখানে দ্বিতীয়বার ভর্তির সুযোগ বন্ধ করে দিচ্ছে সেখানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয়বারসহ যেকোনো বার ভর্তির সুযোগ রয়েছে একজন শিক্ষার্থীর! জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে ১৯৯৩ সালের জুন মাসে অনুমোদিত স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীতে ভর্তির জন্য সংশোধিত অধ্যাদেশ অনুযায়ী এ সুযোগ রয়েছে।
তবে এটি সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। শুধু এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের স্বামী বা স্ত্রীর ক্ষেত্রে এমন অভিনব সুযোগের ব্যবস্থা রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলছেন, এমন বিধান থাকা উচিত নয়। তিনি আইনের সংশধন করবেন। তবে গত দুই যুগ ধরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা এই সুবিধা নিয়ে আসছে এবং বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তারাও নীরব।
অধ্যাদেশের ‘৬ এর ঘ’ ধারায় বলা হয়েছে, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরিরত কোন ব্যক্তির স্ত্রী/স্বামীর ক্ষেত্রে শিক্ষা-বিরতির কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকবে না।’ অর্থাৎ এখানে কর্মরত যেকোনো ব্যক্তির স্বামী বা স্ত্রী যেকোনো সময় ইচ্ছা করলেই ভর্তি হতে পারবে। অন্যদিকে অধ্যাদেশ অনুযায়ী সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য দ্বিতীয়বার পর্যন্তই ভর্তির সুযোগ থাকছে।
আর এই সুযোগ নিয়ে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে (৪৬তম আবর্তন) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভর্তি হয়েছেন তাজরিমা মাহমুদ চৈতি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের একজন সহকারী অধ্যাপকের স্ত্রী।
চৈতির মার্কশিট বিশ্লেষণে দেখা যায়, তিনি ২০১২ সালে মাধ্যমিক এবং ২০১৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন। সে অনুযায়ী ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়ার কথা থাকলেও তিনি ভর্তি হয়েছেন ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে, অর্থাৎ তৃতীয় বারে।
এর আগেও গণিত বিভাগের একজন অধ্যাপকের স্ত্রী এইভাবে ভর্তি হয়েছিলেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ডেপুটি রেজিস্ট্রার জানান।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ডেপুটি রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) আবু হাসান বলেন, ‘এ রকম যে একটি নিয়ম আছে তা আমি তোমার কাছ থেকে প্রথম শুনলাম।’
এমন বিধান অন্য শিক্ষার্থীদের প্রদি বৈষম্যমূলক কি না-এমন প্রশ্নে আবু হাসান বলেন, ‘অবশ্যই।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি কেউ এর কারণ জানতে চায় তাহলে আমরা বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন মহলে আলোচনা করতে পারব।’
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সবার জন্য সমান সুযোগ থাকা দরকার। কারো জন্য বিশেষ সুযোগ থাকা ঠিক না, একটা ভারসাম্য থাকা দরকার সবার জন্য।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইবার কেউ ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইবার সবার জন্য ভর্তির সুযোগ রয়েছে। সেখানে এই আইন থাকা উচিত না। যে আইন আছে সেই আইন সংশোধন করা হবে।’