নাদিকুর রহমান, স্টাফ রিপোর্টারঃ কিছুক্ষন আগে আদালতে পৌঁছালেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। বকশি বাজার পার হওয়ার সময় বিএনপির সমস্ত আইনজীবী দের আটকে রেখেছে পুলিশ। যারা অনেক আগেই আদালত এ গিয়েছিলেন, তারা এখন আবারো আদালতের সামনে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের সাথে এক ধরনের ধস্তাধস্তি হয়।
নিজের বিরুদ্ধে দায়ের করা বহুল আলোচিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় শুনতে আদালতে পৌঁছেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১২টায় গুলশানের বাসা থেকে রওয়ানা দিয়ে তিনি বকশিবাজারে সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে পৌঁছান দুইটার কিছু সময় আগে।
এদিকে আদালতের পথে রওয়ানা দেয়ার পর মগবাজারে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হঠাৎ এসে যোগ দেন শত শত নেতাকর্মী। পুলিশের প্রস্তুতি ছিল খালেদা জিয়া ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে যাবেন। তবে বিএনপি চেয়ারপারসন নিচ দিয়ে যাওয়ায় দলের নেতাকর্মীরা দলে দলে এসে যোগ দেন গাড়িবহরে।
রমনা থানার সামনে পৌঁছার পর খালেদার গাড়িবহরে যুক্ত হওয়া নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে পুলিশের। পরে দফায় দফায় চলা সংঘর্ষের মধ্যেই এগিয়ে চলে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর। এতে ফাঁকা রাস্তায়ও গুলশান থেকে বকশিবাজারে পৌঁছতে সময় লাগে দুই ঘণ্টা।
আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণার প্রস্তুতি আগেই নিয়ে রেখেছে আদালত। ঢাকার বিশেষ জজ-৫ আদালতের বিচারক আকতারুজ্জামান এই রায় ঘোষণা করবেন।
কারাগারে থাকা মামলার আসামি ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও বিএনপির সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামালকেও আদালতে হাজির করা হয়েছে।
গত ২৫ জানুয়ারি রাজধানীর বকশিবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫নং বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামান রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য ৮ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন।
২০০৮ সালের ৩ জুলাই সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় রমনা থানায় মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সেখানে অভিযোগ করা হয়, এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে পাওয়া দুই কোটি ১০ লাখ টাকা ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দেয়া হলেও, তা এতিম বা ট্রাস্টের কাজে ব্যয় করা হয়নি। বরং সেই টাকা নিজেদের হিসাবে জমা রাখার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
তদন্ত শেষে ২০০৯ সালে অভিযোগপত্র দেয়া হলেও ২০১৪ সালের মার্চে মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়।
এই মামলায় অপর আসামিরা হলেন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান, মাগুরার সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ।
প্রায় ১০ বছর ধরে ঢাকার বকশি বাজারের বিশেষ জজ আদালতে এই মামলার বিচার কার্যক্রম চলেছে। এরমধ্যে ৩২ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন এবং ১৬ দিন ধরে যুক্তিতর্ক চলেছে। আদালতে হাজির না হওয়ায় কয়েকবার খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়।
খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালতে বলেছেন, এই ঘটনায় খালেদা জিয়া জড়িত নন, এবং সেই টাকাও আত্মসাৎ করা হয়নি, কারণ এসব টাকা এখনো ব্যাংকের হিসাবেই জমা রয়েছে।
আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, তার বিরুদ্ধে করা সবগুলো মামলাই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে করা, যার কোনোটির আইনি ভিত্তি নেই। এই মামলাটিও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনটিকে বানোয়াট বলেও তিনি বর্ণনা করেন।
তবে রাষ্ট্রপক্ষের দাবি, আদালতে তারা অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছেন।