ডেস্ক রিপোর্ট: দুর্নীতির মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডের আদেশে দেশে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়েছে বলে মনে করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ।
বৃহস্পতিবার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ আসার তিন দিন পর রবিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এই মত জানান পরিষদের নেতারা।
খালেদা জিয়ার এই কারাদণ্ডের রায়ে বিএনপি ক্ষুব্ধ হলেও বেশ কয়েকজন মন্ত্রী বলেছেন, অন্যায় করলে সাজা পেতে হবে, সেটা তিনি যেই হোন না কেন।
বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নেতা সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘আমরা মনে করি এই রায়ের মাধ্যমে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা পেয়েছে। দেশে যে অপসংস্কৃতি ছিল আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখানোর, সে অপসংস্কৃতির অবসান হয়েছে।’
সংবিধানে ২৭ অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে তাপস বলেন, ‘ধনী-গরিব, সাবেক রাষ্ট্রপতি, সাকে প্রধানমন্ত্রী, প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব- কারও সাথে কোন ভেদাভেদ করা যাবে না, সবাই সমান।’
‘এখন আইনের প্রক্রিয়ায় তিনি (খালেদা জিয়া) আপিল করবেন। আদালত বিবেচনা করবেন যে তাকে জামিন দেয়া যায় কি না এবং তিনি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জামিন পেতে পারেন।’
বিএনপির অভিযোগ, এই মামলাটির কোনো সারবত্ত্বা ছিল না। কিন্তু সরকার আদালতকে ব্যবহার করে খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে সরাতে চেয়েছে।
তবে তাপস বলেন, ‘আমরা মনে করি এবং যতটুকু আমরা এজহার এবং চার্জশিট থেকে দেখেছি এ মামলাটি অত্যন্ত পরিস্কার। তারপরও দীর্ঘসময় কালক্ষেপণ করা হয়েছে এ মামলা নিষ্পত্তিতে।’
‘বিদেশ থেকে যে টাকা আনা হয়েছে সে টাকা ফান্ড গঠন করে সেখানে প্রথমে রাখা হয়। পরবর্তীতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট সৃষ্টি করে টাকাটি সেখানে স্থানান্তর করা হয়। সেই ট্রাস্ট থেকে ২০০৭ সাল থেকে কাজী সলিমুল হক কামাল, তারেক রহমান, মুমিনুর রহমান এবং শরফুদ্দীন নামে ব্যক্তিদের নামে টাকা ট্রান্সফার করা হয়।’
‘আমরা জানি একটি ট্রাস্ট করতে হলে ট্রাস্টি বোর্ড থাকে এবং বেনিফিশিয়ারি জন্য সেই টাকা ব্যয় করা হয়ে থাকে। আমরা অত্যন্ত অবাক হয়েছি যেখানে বেনিফিশিয়ারি হিসেবে কোনো এতিম তো দূরে থাক, কোনো গরিব ব্যক্তির জন্য সেই ট্রাস্টের টাকা ব্যবহার করা হয়নি।’
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘যে জাতি যত বেশি আইনের শাসন কায়েম করেছে, সেই জাতিকেই তত বেশি সভ্য মনে করা হয়।’
খালেদা জিয়ার দণ্ড হওয়াকে কেন্দ্র করে বিএনপিসহ একটি প্রতিক্রিয়াশীল মহল দেশে ধুম্রজাল সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করছে বলেও অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
খালেদা জিয়াকে কারাগারে ডিভিসন দেয়া হয়নি বলে বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে তাপস বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ডিভিসন তার প্রাপ্য। সে প্রাপ্য পরিপূর্ণভাবে তাকে দেয়া হয়েছে। সুতরাং নতুন করে ধুম্রজাল ষড়যন্ত্রে সৃষ্টির অবকাশ নেই।’
তাপসের অভিযোগ বিএনপি ২০১৩, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে দেশে যে ‘বিশৃঙ্খল’ পরিস্থিতি তৈরি করেছিল, এই রায়কে ঘিরে একই ধরসের ‘ষড়যন্ত্রে’ লিপ্ত।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘জেলকোড অনুযায়ী বেগম জিয়া প্রাপ্য সুযোগ সুবিধা তাকে দেয়া হয়েছে।’
‘নির্বাচন করতে পারবেন খালেদা জিয়া’
এই রায়ের কারণে খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশ নেয়ার যোগ্যতা হারিয়েছেন কি না- এমন প্রশ্নে সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন, ‘সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নৈতিক স্খলনজনিত কারণে অভিযুক্ত হয়ে কারও দুই বছরের অধিক সাজা হলে সাজার পরবর্তী পাঁচ বছর তিনি নির্বাচনে অযোগ্য হবেন।’
‘কিন্তু এই রায়ের বিরুদ্ধে এখন হাইকোর্টে আপিল হবে। তিনি জামিন আবেদন করতে পারবেন। তিনি মামলা স্থগিতও চাইতে পারেন। …আপিল চলা অবস্থায় একেবারে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক আইনমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়ার আপিলে যদি সাজা টিকে যায়, তখন যদি তিনি সংসদ সদস্য হন, তাহলে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে ওই আসনে উপনির্বাচন হবে।’
বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, নুরুল ইসলাম সুজন প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।