নাদিকুর রহমান, ঢাকাঃ ঠাকুরগাঁও জেলা সদর উপজেলার শিক্ষা অফিসার লিয়াকত আলী সরকারের দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তের দিনে ৩০টি বিদ্যালয়ের প্রধান ও সহকারী শিক্ষকদের বিদ্যালয়ের পাঠদান থেকে বিরত রেখে তদন্ত কর্মকর্তার নিকট দুর্নীতি ঢাকাতে সাফাই গাওয়ালেন শিক্ষা অফিসার।
১৪ই মে ২০১৮ তারিখ সদর উপজেলার মধুপুর খাঁপাড়া, রুহিয়া-২, বি-আখড়া মডেল, সিংপাড়া কৃষ্টপুর, খামার ভপলা, মুন্সিপাড়া, ভাওলারহাট, পূর্ব আরাজী চন্ডিপুর, পি-মোহাম্মদুপর ও বগুলাডাঙ্গী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষকরা সকালে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে বেড়িয়ে পড়েন। খবর নিয়ে জানা যায়, সকাল ১০টার দিকে ৩০-৩৫ জন শিক্ষক শিক্ষা অফিসারের অফিস রুমে উপস্থিত হন। মুঠো ফোনে সহকারী শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর আলমের কাছে বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে ১৪ই মে ২০১৮ সকাল ১১.০০টায় জেলা শিক্ষা অফিসে তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষকরা তদন্ত কর্মকর্তার সাথে দেখা করে। জেলা শিক্ষা অফিসে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ৩০-৩৫ জন শিক্ষক জেলা শিক্ষা অফিসের মূল ফটকে শ্লোগান দিচ্ছেন- শিক্ষা অফিসার দুর্নীতি মুক্ত তাকে হয়রানি করা হচ্ছে। নেতৃত্ব দিচ্ছেন শিক্ষক নেতা ইমাম গাজ্জালি, ইয়াছিন আলী প্রমুখ।
বিষয়টি তদন্ত কর্মকর্তা নীলফামারী জেলার শিক্ষা অফিসার ওসমান গনীর নিকট জানতে চাইলে বলেন, ৩০-৩৫ জন শিক্ষক আমার কাছে এসেছিলেন এবং তাদের স্বাক্ষরিত একটি আবেদন জমা দেন। যাতে লিখা ছিল শিক্ষা অফিসার দুর্নীতি মুক্ত। আবেদন জমা দিয়ে শিক্ষা অফিসারের নির্দেশে শিক্ষকরা এবং সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর, জয়েন্ত, শাখাওয়াত ও নিত্যানন্দ জেলা শহরের হিমেল হোটেলে বিরিয়ানী খেয়ে বাড়ী ফিরেন। বিদ্যালয়ের পাঠদান ও পরিদর্শন বন্ধ রেখে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এ ধরনের কার্যক্রমে থাকতে পারবে কি না জানতে চাইলে উপ-পরিচালক, রংপুর এবং পরিচালক, পলিসি ও অপারেশন শিক্ষা অধিদপ্তর জানান বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এরপর গত ২৩-০৫-২০১৮ ইং তারিখে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে গিয়ে মহাপরিচালকের কাছে বিষয়টি অবগত করলে তিনি তার একান্ত সচিব ফিরোজ সাহেবের কাছে হস্তান্তর করেন। পরের দিন ২৪-০৫-২০১৮ইং তারিখে আবার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে ফিরোজ সাহেবের কাছে গেলে তিনি দপ্তরিকে বলেন যে কাগজ জমা দেওয়া হয়েছিল সেটা নিয়ে আসার জন্য । প্রায় ৩০ মিনিট খুজেও কাগজগুলো পাওয়া গেল না । পাওয়া যাবেই বা কোত্থেকে, কারণ ফিরোজ সাহেবের টেবিলেই কাগজগুলো ছিল । তিনি অযথাই আমাদেরকে হয়রানী করান । পরে তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি ধমকের সুরে কথা বলেন ও কথা ঘুরানোর চেষ্টা করেন । পরে তিনি বলেন বিষয়টি দেখবেন কিন্তু অনেক সময়ও লাগতে পারে ।
এরপর গত ২৮-০৫-২০১৮ইং তারিখে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে গিয়ে ডিরেক্টর (পলিসি অপারেশন) জসিমউদ্দিন আহমেদের সাথে বিষয়টি বললে তিনি বলেন তিনি একাই খুব দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং এ বিষয়ে কেউ না দেখলেও চলবে।
আজ ০৩-০৬-২০১৮ইং তারিখে জসিমউদ্দিন আহমেদের অফিসিয়াল নাম্বারে ফোন করলে কেউ একজন ফোন ধরলে জসিমউদ্দিনকে চাইলে তিনি বলেন স্যার আছেন তবে আপনার পরিচয়টা আগে দিন। পরিচয়ে স্টাফ রিপোর্টার নাদিকুর রহমান বললে আর কোনো কথার আওয়াজ পাওয়া যায় না। আবারো ফোন করলে বলে স্যার নেই মিটিং এ আছেন। অথচ একটু আগেই তিনি বলেছিলেন জসিমউদ্দিন আহমেদ আছেন।