1. rajubdnews@gmail.com : admin :
  2. 52newsbangla@gmail.com : News 52 Bangla : Nurul Huda News 52 Bangla
  3. 52newsbangla1@gmail.com : News 52 Bangla : Nurul Huda News 52 Bangla
শনিবার, ০৩ জুন ২০২৩, ০২:২৬ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ :

কালীগঞ্জে বিদেশী লিলিয়ামসহ চাষ হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল ,ভালবাসা ও মাতৃভাষা দিবসে কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট

প্রতিবেদকের নাম :
  • আপডেটের সময় : মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

কালীগঞ্জে বিদেশী লিলিয়ামসহ চাষ হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল ভালবাসা ও মাতৃভাষা দিবসে দুই কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট\ চায়না থেকে প্লাষ্টিকের ফুল আমদানি বন্ধের দাবি ফুল। চাষীদের

কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি\
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা এখন দেশের দ্বিতীয় ফুলের রাজধানী হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে চলেছে। ফুলের রাজধানী নামে খ্যাতো যশোর জেলার ঝিকরগাছা গদখালী। তার পরেই স্থান করে নিয়েছে কালীগঞ্জ উপজেলা । যশোর ও ঝিনাইদহ এ দু’জেলা থেকে সারাদেশে পাঠানো হয় হরেক রকমের ফুল। বাংলাদেশের ফুলের অর্ধেক চাহিদা পূরণ হয় এ দুু’জেলা থেকে পাঠানো ফুল দিয়ে। আসছে “বিশ্ব ভালবাসা দিবস” পহেলা ফাল্গুন ও “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা” দিবসে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের ফুলচাষীরা দেড় থেকে দুই কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট নিয়েছেন। বর্তমানে ফুলচাষীরা তাদের ক্ষেতের ফুল পরিচর্যা করে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, চলতি বছর জেলার ৬ উপজেলায় ২০৮ হেক্টর জমিতে বিদেশী ফুল লিলিয়াম, জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকা, থাইগোলাপ, গ্লাডিওলাসসহ বিভিন্ন রকমের ফুলের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে শুধুমাত্র কালীগঞ্জ উপজেলার ফুলের আবাদ হয়েছে ১০০ হেক্টর জমিতে। কালীগঞ্জে চাষ হওয়া ফুলের মধ্যে রয়েছে, লিলিয়াম, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গোলাপ, চন্দ্র মল্লিকা, ভুট্রাফুল, গাঁদাফুল, থাই গোলাপসহ বিভিন্ন রকমের ফুল।

ঝিনাইদহ জেলার সবচেয়ে বড় ফুলচাষী কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর গ্রামের এস এম টিপু সুলতান জানান, দক্ষিণাঞ্চলের হন্ডিতে টাকা লগ্নি করে যখন এ অঞ্চলের মানুষ দেউলিয়া হয়ে পড়ে সে সময় থেকেই তিনি ফুল চাষের সাথে জড়িত হন। তিনি প্রথম ফুল চাষ শুরু করেন বলে দাবি করেন। তিনি শেরে বাংলানগর ফুলচাষী ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতি লিমিটেডের সহ-সভাপতি। ঢাকায় তার ফুলের ব্যবসাও রয়েছে। তিনি কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুরের মাঠে মোট ১৫ বিঘা জমিতে ফুলের আবাদ করেছেন। এর মধ্যে ২ বিঘা জমিতে গোলাপ, ৬ বিঘা জারবেরা, ২ বিঘা গ্লাডিওলাস, ৩ বিঘা ভুট্টা ফুল ও ২ বিঘা চন্দ্র মল্লিকা ফুল রয়েছে। পাশাপাশি তিনি ২ বিঘা জমিতে পেয়ারা, ২ বিঘা ৫কাঠা জমিতে ড্রাগনফল ও ৩ কাঠা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করেছেন বলে জানান তিনি।
টিপু সুলতান আরো জানান, তিনি ২৭ বছর ধরে ফুলের সাথে জড়িত। সর্ব প্রথম গøাডিওলাস দিয়ে ফুলের চাষ শুরু করেন। এরপর জারবেরা ফুলের আবাদ করেন। সর্বশেষ গত ২০১৭ সালে নেদারল্যান্ডের ফুল লিলিয়ামের চাষ করেন। নেদারল্যান্ড থেকে ২৯ লাখ টাকা দিয়ে ৬০ হাজার পিচ লিলিয়াম ফুলের বীজ আনেন। জাহাজ ভাড়া সাড়ে ৩ লাখ টাকাসহ অন্যান্য খবর দিয়ে তার মোট লিলিয়াম ফুলের জন্য ব্যয় হয় প্রায় ৪৬ লাখ টাকা। কিন্তু সময় মত ফুল না উঠায় সে বছর তিনি তেমনভাবে ফুল বিক্রি করতে পারেননি। গত দুই বছর তিনি লিলিয়াম ফুল বিক্রি করছেন। কিন্তু চলতি বছর তার জমিতে তেমন লিলিয়াম ফুল নেই। তার ফুলের আবাদ দেখার জন্য রয়েছে ৪ জন স্থায়ী কর্মী। এছাড়া প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ জন ব্যক্তি পরিচর্যার জন্য কাজ করেন। স্থায়ী ৪ জনকে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেতন দেয়া হয়। বাকিদের প্রতিদিন জনপ্রতি ২০০ টাকা করে হাজিরা দেন। ফুলের পরিচর্যা, সেচ, সার, ঔষুধ, পরিবহনসহ তার প্রতিবছরে ব্যয় হয় ২৪ থেকে ২৫ লাখ টাকা। বছরে তিনি অর্ধ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করেন বলেও জানান। ব্যয় বাদে তার বছরে লাভ থাকে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা।

এ ব্যবসায়ী আরো জানান, ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ফুলের ব্যবসা ভাল হয়। এ সময় ফুলের দাম ভাল পাওয়া যায়। তিনি পাইকারী হারে ১টি লিলিয়াম ফুল ১০০ টাকা, জারবেরা ১২ থেকে ১৮ টাকা, গ্লাডিওলাস ১২ থেকে ১৯ টাকা. গোলাপ ৫ থেকে ১০ টাকা, চন্দ্র মল্লিকা ১ থেকে ৩ টাকা, ভুট্টা ফুল ৩ থেকে ৭ টাকা করে বিক্রি করে থাকেন। অবশ্য বাজার ভাল হলে দাম বেশি পাওয়া যায়। সে সময় প্রতিটি ফুলের দামও বৃদ্ধি পায়। আসছে বিশ্ব ভালবাসা দিবস, পহেলা ফাল্গুন ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এতিনটি মিরিয়ে তিনি একাই ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবেন। তিনি দাবি করেন, চলতি বছরে ঝিনাইদহ জেলা থেকে তিন দিবসে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার ফুল বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরো জানান, চায়না থেকে প্লাষ্টিকের ফুল আমদানি বন্ধহলে ফুল চাষষীরা আরো বেশি লাভোবান হবেন। তাই তিনি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন ফুলচাষীদের বাঁচিয়ে রাখতে ও বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য প্লাষ্টিকের ফুল আমদানি বন্ধ করতে সরকারের কাছে বিশেষ অনুরোধ করেন।

চলতি বছর তার নতুন আবাদ করা ফুলের মধ্যে রয়েছে ভুট্টা ফুল। ৩ বিঘা জমিতে ১ লাখ পিচ ভ্ট্টুা ফুল গালিয়েছিলেন। ইতিমধ্যে তিনি ৪ /৫ লাখ টাকার ফুলও বিক্রি করেছেন। একই এলাকার ফুলচাষী জিল্লুর রহমান, নয়ন মিয়াসহ কয়েক জন চাষী জানান, তারাও এই তিন দিবসে কয়েক লক্ষ টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবেন। যশোর রাজার হাট এলাকা থেকে ফুলের চাষ করতে আশা মাহাবুর হোসেন জানান, তিনি দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন সেখান থেকে এসে ৩বিঘা জমিতে জারবেরা চাষ করেছেন। আসন্ন তিন দিবসে তিনিও কয়েক লক্ষ টাকার ফুল বিক্রি করবেন বলে জানান।

কালীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের ডুমুরতলা গ্রামের ফুলচাষি মিজানুর রহমান জানান, তারা গাঁদা ফুলের চাষ করেন। চলতি বছর তিনি ৫ কাঠা, একই এলাকার মোহাম্মদ আলী ও এমদাদুল হক দুই ভাই মিলে ৮ কাঠা, আব্দুল আলীম ৫ কাঠা জমিতে ফুলের আবাদ করেছেন। তিনি আরো জানান, দড়িতে ফুল গেঁথে ঝোপা তৈরি করা হয়। এক ঝোপায় সাড়ে ৬শ থেকে ৭শ গাদা ফুল থাকে। ফুলের মূল্য কম থাকলে এক ঝোপা বিক্রি হয় ৩০ টাকায়। দাম বাড়লে সর্বোচ্চ ৭শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারেন। বর্তমান তারা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা দরে প্রতি ঝোপাফুল বিক্রি হচ্ছে।

ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃপাংশু শেখর বিশ্বাস জানান, জেলার চলতি বছর প্রায় ২০৮ হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে কালীগঞ্জ উপজেলায়ই ৯০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ হয়েছে। উৎপাদন ব্যয় কম, আবার লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরা ফুল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। জেলার গান্না ও কালীগঞ্জের বালিয়াডাঙ্গা, তিল্লা, সিমলা, রোকনপুর, গোবরডাঙ্গা, পাতবিলা, পাইকপাড়া, তেলকূপ, গুটিয়ানী, কামালহাট, বিনোদপুর, দৌলতপুর, রাড়িপাড়া, মঙ্গলপৈতা, মনোহরপুর, ষাটবাড়িয়া, বেথুলী, রাখালগাছি, রঘুনাথপুর কোলাবাজারসহ জেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠে ফুল চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি গাধা ফুল চাষ হয় কালীগঞ্জে বালিয়াডাঙ্গা এলাকায়। এ কারণে সবাই এখন এই এলাকাকে ফুলনগরী বলেই চেনেন।
সরেজমিনে বালিয়াডাঙ্গা বাজার ও কালীগঞ্জের মেইন বাসস্ট্যান্ডে দেখা যায়, দুপুর থেকে শত শত কৃষক তাদের ক্ষেতের উৎপাদিত ফুল ভ্যান, স্কুটার ও ইঞ্জিনচালিত বিভিন্ন পরিবহন যোগে নিয়ে আসছেন। বেলা গড়ানোর সাথে সাথে বালিয়াডাঙ্গা বাজার ও কালীগঞ্জ মেইন বাসস্ট্যান্ডে, ভরে যায় লাল, সাদা আর হলুদ ফুলে ফুলে।
সারাদেশের আড়তগুলোতে ফুল পাঠাতে আসা একাধিক ফুলচাষিদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সারা বছরই তারা ফুল বিক্রি করে থাকেন। তবে প্রতিবছর বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষের দিন, স্বাধীনতা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ভালবাসা দিবস পহেলা ফাল্গুনসহ প্রভৃতি দিনগুলোতে ফুলের অতিরিক্ত চাহিদা থাকে। এ সময় দামও থাকে ভালো। ফুলচাষিরা নিজেরা না এসে সারা বছর তাদের ক্ষেতের ফুল চুক্তি মোতাবেক ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বড় বড় শহরের ফুলের আড়তে পাঠিয়ে দেন। এ সকল স্থানের আড়তদারেরা বিক্রির পর তাদের কমিশন রেখে বাকি টাকা পাঠিয়ে দেন। ফলে ফুল চাষিদের টাকা খরচ করে ফুল বিক্রির জন্য কোথাও যাওয়া লাগেনা। তারা মোবাইল বা ফোনালাপের মাধ্যমে বাজার দর ঠিকঠাক করে ফুল পাঠিয়ে থাকেন বলেও জানান কৃষকরা।

এদিকে ফুলের আবাদকে কেন্দ্র করে কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা বাজারে গড়ে উঠেছে ফুলের জন্য আলাদা বাজার। ফুলচাষীরা সরাসরি এ বাজারে ফুল বিক্রি করতে আসেন। ফুলচাষীদের কাছ থেকে সরাসরি ফুল ক্রয় করেন এ বাজারের শুকুর আলী, ইউসুফ আলী, প্রদীপ বাবু, শামীম, ফজলুর রহমানসহ একাধিক ফুল ব্যবসায়ী।
বালিয়াডাঙ্গা গোপীনাথপুর গ্রামের ফুল ব্যবসায়ী শুকুর আলী জানান, তিনি ফুলচাষীদের কাছ থেকে সরাসরি গাঁদা ফুল ক্রয় করে থাকেন। বর্তামানে এক ঝোপা হলুদ গাঁদা ফুল ৩৫০/৪৫০ টাকা ও এক ঝোপা লাল গাঁদা ফুল ৫০০ টাকা দরে ক্রয় করছেন।

তিনি বলেন, কালীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার আবাদ করা ফুল যাচ্ছে, ঢাকা, চট্রাগ্রাম, সিলেট, রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, খুলনা, বরিশাল, সিরাজগঞ্জ, সৈয়দপুর, রংপুর, নওগা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জাহিদুল করীম বলেন, ঝিনাইদহ জেলার মধ্যে কালীগঞ্জ উপজেলাতেই ফুলচাষ সবচেয়ে বেশি হয়। চলতি বছর কালীগঞ্জ উপজেলাতে ১০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ফুল চাষ হয়েছে এ ফুল চাষের সঙ্গে প্রায় ৭শ থেকে ৮শ ফুলচাষী জড়িত। এখানে বিদেশী ফুল লিলিয়াম, জারবেরা, গ্লাডিওলাসসহ গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা, ভুট্টাফুলের চাষ হচ্ছে। আমরা কৃষি বিভাগ থেকে ফুলচাষীদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে আসছি।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই বিভাগের আরও খবর
2019 All rights reserved by |Dainik Donet Bangladesh| Design and Developed by- News 52 Bangla Team.
Theme Customized BY News52Bamg;a