মেলায় ইবির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ব্যতিক্রমী তিন উদ্ভাবনী প্রদর্শন।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যাল,প্রতিনিধি-
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) তিন দিনব্যাপী বই ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন মেলার শেষ দিন আজ রবিবার। সন্ধ্যা নামলেই বিদায়ের ঘন্টা বাজবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এবারের মেলা।
মেলায় মোট ৪৫ টি স্টলের মধ্যে ৫-৭ টি স্টলে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ এবং জীব বিজ্ঞান অনুষদের কয়েকটি বিভাগ প্রযুক্তি উদ্ভাবনী প্রদর্শন করছেন। তন্মধ্যে পরিবেশ বিজ্ঞান ও ভূগোল বিভাগের উদ্ভাবন ছিল ব্যতিক্রমী। পরিবেশ সুরক্ষা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় তাদের উদ্ভাবিত তিন মাস্টার প্লান মেলায় আগত দর্শনার্থীদের নজর কেড়েছে। মেলার ২৯ নম্বর স্টলে সবসময় দেখা যাচ্ছে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভীড়। অনেকেই কৌতুহল বশত এ উদ্ভাবনীর মূল রহস্য এবং খুুঁটিনাটি জেনে নিচ্ছেন।
স্টলে অবস্থানরত বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, ‘ইকো ফ্রেন্ডলি ইবি ক্যাম্পাস’, ‘ওয়েষ্ট ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট প্লান’ এবং ‘ওয়াটার ডিস্যালানাইজেশন এন্ড হাইড্রোলেট্রিক পাওয়ার প্লান্ট’ নামের তিনটি উদ্ভাবনী প্রদর্শন করছেন তারা। প্রথম উদ্ভাবনী প্লান সম্পর্কে তারা জানান, ক্যাম্পাসের ১৭৫ একরের প্রতি ১০০ মিটার পর পর ২টি করে ডাষ্টবিন স্থাপন করতে হবে। যার একটি পচনশীল বর্জ্য ফেলার জন্য ( সবুজ ডাষ্টবিন) অন্যটা অপচনশীল বর্জ্য ফেলার জন্য ( লাল ডাষ্টবিন)। পচনশীল বর্জ্যটি বায়োগ্যাস প্লান্টে স্থানান্তর করতে হবে। সাথে সাথে বিভিন্ন হল, বিভাগের নষ্ট পচনশীল বর্জ্যগুলোও বায়োগ্যাস প্লান্টে স্থানান্তর করতে হবে।
এসব ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের দাবি, বায়োগ্যাস প্লান্ট থেকে উৎপাদিত গ্যাস বিভিন্ন হলের ক্যান্টিনে সরবরাহ করা সম্ভব। উপজাত বর্জ্য ক্যাম্পাসের বোটানিক্যাল গার্ডেনসহ বিভিন্ন বাগানের সার হিসেবে ব্যবহার সম্ভব। এছাড়া অপচনশীন বর্জ্য ওয়েষ্ট ম্যানেজমেন্ট প্লান্টে স্থানান্তর করার মাধ্যমে পুনঃব্যবহার এবং পুনঃ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। প্রতিটি বিল্ডিং এর উপর সোলার প্যানেল স্থাপন করার মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা। এতে করে নবায়নযোগ্য উৎস থেকেও বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। কয়লা এবং গ্যাসের উপর চাপ কমার সাথে সাথে পরিবেশ দূষণের মাত্রাও কমবে। এছাড়া রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং করার মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এতে করে ভূগর্ভস্থ পানির উপর চাপ কমবে।
নতুন বিল্ডিং স্থাপনে ২৫% এর কম বনায়ন যেন না হয় সেই উদ্দেশ্য বিল্ডিং এর ছাদে, ফাঁকা জায়গায়, বারান্দার পাথে বিভিন্ন ধরনের লতা বা গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ লাগানো যায়। এতে সৌন্দর্য বৃদ্ধির সাথে সাথে অক্সিজেনের চাহিদা পূরন হবে। এছাড়া রাস্তার পাশে ঘাস রোপণ করার মাধ্যমে ধুলাবালির সমস্যা নিরসন সম্ভব বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
‘ওয়েষ্ট ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট প্লান’ সম্পর্কে তারা বলেন, শহরের বর্জ্য পানিকে দূষণমুক্ত করার মাধ্যমে বসতবাড়ি উপযুক্ত করার সাথে সাথে উক্ত পানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা এবং ফসলী জমিতে পানি সরবরাহ করা যাবে। এটি বর্তমান গ্রাউন্ড ওয়াটার লেভেল সমস্যা সমাধানে অনেকটা সাহায্য করবে।
‘ওয়াটার ডিস্যালানাইজেশন এন্ড হাইড্রোলেট্রিক পাওয়ার প্লান্ট’ সম্পর্কে বিভাগের শিক্ষার্থীরা বলেন, সমুদ্রের লবনাক্ত পানি থেকে লবন দূর করে খাওয়ার উপযোগী করা এবং উক্ত পানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করাই এ উদ্ভাবনের মূল উদ্দেশ্য।
বিভাগের প্রভাষক ইনজামুল হক সজল বলেন,‘ আমরা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আগাচ্ছি। আমাদের উদ্ভাবনীগুলো বর্তমানে ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও এটার বাস্তব প্রয়োগ ঘটাতে পারলে ক্যাম্পাস সহ সবখানে পরিবেশ সুরক্ষা সম্ভব হবে। পরিবেশ সুরক্ষা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় যা যা করণীয় আমরা তার চেষ্টা অব্যহত রাখব।