বিশেষ প্রতিবেদন : বিশ্বব্যাপী হানা দিয়েছে মহামারি করোনা ভাইরাস। এ ভাইরাস থেকে বাঁচতে গৃহে অবস্থান করছে দেশের মানুষ। ফলে কর্মহীন ও অসহায় হয়ে পরেছে সারাদেশের মতো হবিগঞ্জ শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ৭নং নুরপুর ইউনিয়নের এলাকার দরিদ্র মানুষেরা।
অসহায় মানুষদের সাহায্যের জন্য সরকার সারাদেশে ত্রাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এ এলাকার মানুষ। ত্রাণের লিস্টে নাম থাকা সত্ত্বেও ত্রাণ পাচ্ছেন না অসহায় মানুষরা। ফলে না খেয়ে দিন যাপন করতে হচ্ছে অনেককে।
গত ১ এপ্রিল নুরপুর ইউনিয়ন অফিসের সামনে হাজার হাজার মানুষের ভীড় জমে ত্রাণের জন্য। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমি আক্তার ও উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ তালুকদারের উপস্থিতি দু’একজনকে ত্রাণ দিয়ে বন্ধ করে দেয় বিতরন। পরে চেয়ারম্যান মুখলিছ মিয়া নিজের পছন্দের লোকদেরকে ত্রাণ বিতরণ করেন।
অভিযোগ উঠে ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের বেশ কয়েকজন পরিবারের ত্রাণের লিস্টে নাম থাকা সত্ত্বেও তারা কোন ত্রাণ পায়নি।
৯নং ওয়ার্ডের সুরাবই গ্রামের ৬৫ বছরের আমেনা বেগম বলেন, আমি না খেয়ে দিন যাপন করি। আগে মাইনষেন বাড়িতে কাইম কাজ করতাম এহন করোনা আউনে কারো বাড়িতে যাইয়া কাইম কাজ করতে পারিনা। মাইনষে কইছে চেয়ারম্যানের কাতাত নাকি আমার নাম আছে, আমি অহন তামাত কোন চাউল পাইছিনা। একই গ্রামের ৬০ বছরের বৈচার মা বলেন, আমি মানুষ মইরা গেলা লাশ ধুইয়া দেই, আরেকজনের বাড়িত থাহি, চেয়ারম্যান বলে আমার নামে চাউল আইনা খাইয়া পালাইছে।
৭০ বছরের রুকন উদ্দীনের স্ত্রী বলেন, আমার স্বামী নেই, এক পুলা লইয়া অনেক কষ্টে দিন যায়, মেম্বারের বাড়িত গিয়া কইছি। এরপরও আমারে চাউল দেয়নাই। শুনছি আমার নামে চাউল আইন্না অন্যজনরে দিয়া দিছে। এরকম অভিযোগ মন্নাফের মা, হেলিম মিয়া, আনোয়ারা বেগমসহ অনেকের।
চেয়ারম্যান মুখলিছ মিয়া অসহায় মানুষের নামে ত্রাণ তুলে আত্মসাত করেন বলেও অভিযোগ করেন এলাকার অনেক ভুক্তভোগীরা। এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে গিয়ে দেখা যায়, ভুক্তভোগীরা ত্রাণ পেয়েছে বলে তাদের নামের পাশে টিপ সহি রয়েছে। কিন্তু নামের পাশে ভোটার আইডি নং বা পিতা/স্বামীর নাম উল্লেখ নেই। ভুক্তভোগীদের দাবী তারা কোন টিপসহি বা স্বাক্ষর করেননি।
৯নং ওয়ার্ড মেম্বার আবু বকর সিদ্দিক বলেন, তারা ত্রাণ পায়নি বিষয়টি শুনেছি। তবে কেন পায়নি তা চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে তাদের জন্য ব্যবস্থা করা হবে।
চেয়ারম্যান মুখলিছ মিয়া বলেন, পর্যাপ্ত পরিমান ত্রান না থাকায় ত্রান বিতরন করা যাচ্ছে না। কিন্তু লিস্টে না থাকা সত্ত্বেও কেন ত্রাণ পায়নি এমন প্রশ্নে চেয়ারম্যান মুখলিছ মিয়া পুরোপুরি অস্বিকার করে বলেন, প্রত্যেকেই ত্রাণ পেয়েছে। এখন কেন অস্বিকার করছে তা আমার জানা নেই।
জানতে চাইলে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমি আক্তার এ বিষয়ে বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।