স্টাফ রিপোর্টারঃ
চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তিতে জাতীয় দৈনিক আলোকিত সকালের শাহরাস্তি উপজেলা প্রতিনিধি,সাপ্তাহিক সকলের কন্ঠের অতিথি লেখক,দূর্বার নিউজ অনলাইন পোর্টালের সম্পাদক সাংবাদিক মোঃ রুহুল আমিনের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নং ১৪, তারিখঃ ১৮/৪/২০২০ ইং। চাঁদপুরের শাহরাস্তি থানায় বিগত ২৮ এপ্রিল শুক্রবার উক্ত মামলা হয়েছে বলে জানা যায়।
মামলার এজাহার ও থানা সূত্রে জানা যায়, ফেসবুকে ৩৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও আপলোডের কারণে শাহরাস্তি পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের কমিশনার সাহাপুর গ্রামের বাসিন্দা মোঃ সাহাব উদ্দিন আলম(৪৮), পিতা- মৃত কোরবান আলী শাহরাস্তি থানায় এই মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, “এই মর্মে অভিযোগ দায়ের করিতেছি যে, চলমান করোনা ভাইরাস কোভিট-১৯ পরিস্থিতিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা গরিব, অসহায় ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণের যে ঘোষণা দিয়েছেন সেই ঘোষণা অনুযায়ী ত্রাণ সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, এমপি মহোদয় গরিব, অসহায় ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মধ্যে উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি দ্বারা ত্রাণ বিতরণ করিয়া আসিতেছেন।
উক্ত আসামী গত ২৪/৪/২০২০ইং তারিখ বেলা আনুমানিক ১১.২৬ ঘটিকার সময় তাহার ফেসবুক আইডি Ruhul Amin (তরুন) হইতে একখানা ভিডিও সহ পোষ্ট করে যে, “জানিনা কি বলবে সূধী সমাজ ? একজন মানুষ ভাত খাওয়ার আকুতি জানিয়ে কিভাবে কথা বলতে পারে এটা কেউ কাছ থেকে না দেখলে বুঝার উপায় নেই। এবিষয়ে কোন কথা লিখলে একশ্রেণির জনপ্রতিনিধির গায়ে আগুণ ধরে। দৌড়ে যায় মামলা করতে, পারলেতো হামলাও করে। অসহায় এই মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কেউ আছেন ?
নাম-আঞ্জুমান আরা বেগম, পিতা-আব্দুর শুকুর,গ্রাম-সোনাপুর, শাহরাস্তি পৌরসভার, ৪ নং ওয়ার্ড,শাহরাস্তি, চাঁদপুর।”
এ বিষয়ে সাংবাদিক মোঃ রুহুল আমিন তরুণ বলেন, কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য মূলক ভাবে হেয় করার জন্য তিনি এই ভিডিওটি করে নেটে ছাড়েননি। এবিষয়ে তিনি গত ২৪ এপ্রিল তারিখের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমি সাংবাদিক ও শিক্ষক। করোনার কারনে সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী দেশব্যাপী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। সাংবাদিকতাও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সীমিত পরিসরে করছি। আমি নিয়মিত ভােরবেলা নামাজ পড়ে হাঁটতে বের হই। ঐদিনও সকাল সকালে আমি হাঁটতে বের হই। আগের দিন রাতে কাতার প্রবাসি মোঃ মাহবুব আলম আমাকে জানিয়েছেন তিনি ২৪ তারিখ সকাল ৮ ঘটিকায় স্থানীয় নাওড়া রেল গেইটে কিছু মানুষকে পবিত্র রমজান উপলক্ষে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করবেন। সাংবাদিক হিসাবে আমি যেন ঐ ইফতার সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকি। আমি যথারীতি সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম।
উক্ত অনুষ্ঠানে স্থানীয় শাহরাস্তি পৌরসভার মেয়র হাজী আবদুল লতিফ সহ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ তোফায়েল আহমেদ ইরানসহ আরো গণ্যমান্য অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে আমি বাড়ি ফিরছিলাম।পথিমধ্যে যার ভিডিও টি নিয়ে এই মামলা তার সাথে সাক্ষাৎ। এই মহিলা আমার পূর্ব পরিচত এবং প্রতিবেশীও বটে। তার সাথে দেখা হতেই তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকেন। ভাই ওরা ইফতার সামগ্রী বিতরণ করলো। আমারে দিলো না। আপনি আমার সাথে গিয়ে অনুরোধ করলে আমাকেও ইফতার সামগ্রী দিবে।জবাবে আমি বললাম, কোন ব্যক্তি কাউকে কিছু দান করলে এটা তার চিন্তা ও ভাবনা থেকে তা করে থাকে। তাছাড়া যে মাহবুব ইফতার সামগ্রী বিতরণ করেছে। সেই বিতরণকারি দেশে নেই। তার পক্ষে ওই ইফতার সামগ্রী বিতরণ করছে তার ছোট ভাই সহ অন্যরা। তাছাড়া আমি যতদূর জানি,ইফতার সামগ্রী বিতরণ করা শেষ।
একথা শুনে মহিলা বললেন-তাহলে আমি যাই। জবাবে আমি বললাম, গিয়ে দেখতে পারেন। যে কথা সেই কাজ। মহিলা ইফতার সামগ্রীর জন্য গেলেন আর আমি বাড়ির পথ ধরে হাঁটতে শুরু করলাম। ৮/১০ মিনিট পর তিনি বাড়ি যাওয়ার সময় আমার বাড়ির সামনে থাকা ঘাটে আমাকে বসা অবস্থায় দেখে আমার কাছে আসেন। আর এসেই চিৎকার করে বলতে থাকেন। ভাই ওরা আমাকে দুই কেজি ছোলা ও এক কেজি মুড়ি দিয়েছে। আমারে চাউল দেয়নি। জবাবে আমি বললাম, যা পাইছেন তা নিয়ে সবুর করেন। এসময় তিনি চিৎকার করে বলতে থাকেন, আমার পরিবারে সদস্য সংখ্যা ৫ জন। আজ রাতে সেহেরি খাবো যে তার জন্য ভাত রান্না করার চাউল নেই। একথা শুনে আমি ওনাকে ১০০ টাকা দিয়ে বললাম,এই টাকা দিয়ে দুইকেজি চাউল কিনে বাড়ি যান। তিনি (মহিলা )বলেন আমি গ্রামের দক্ষিণে থাকা দোকান হতে চাউল কিনে বাড়ি যাবো।
এসময় আমি বললাম আপনি কি মানুষের উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন জবাবে তিনি বলেন হ্যাঁ বলবো। আর সে অনুযায়ী আমি তার ৩৮ সেকেন্ডের ভিডিও ধারণ করি। ভিডিওটি দেখে যদি কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। তবে একজন অভাবি মানুষের কষ্ট লাগব হবে। শুধুমাত্র এমন চিন্তা করেই আমি ভিডিও টি নেটে দিয়েছি।
এদিকে সচেতনরা বলছেন,একটি ভিডিও আপলোড নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কারন ভিডিও টি সাংবাদিক তার আইডি থেকে দিয়েছেন। তাও সেটি নিজের জন্য নয় মানব কল্যাণে।
যদি তথ্যগত কোন ভুল থাকে বা কারো বিপক্ষে গিয়ে থাকে। তাহলে এক্ষেত্রে সামান্য আলাপচারিতার মাধ্যমেই বিষয়টিই শেষ হতে পারে।
কেননা শাহরাস্তিতে সাংবাদিক ও জনপ্রতিনিধিগণের সু-সম্পর্ক বেশ পুরোনো। সেখানে জনপ্রতিনিধি হয়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এক রকম মামলা ঠুকে দেওয়া দুঃখজনক ।
তাই অবিলম্বে এ ঘটনা সমাধানে স্থানীয় সংসদ সহ সুধী মহলের হস্তক্ষেপে শাহরাস্তিতে সাংবাদিক ও জনপ্রতিনিধিদের সু-সম্পর্ক অটুট রাখা হবে বলে সবাই প্রত্যাশা করছেন।