মনিরুজ্জামান মনির, ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
নিষ্ঠা ও দায়িত্বের সাথে ক্লুলেস হত্যা মামলা উদঘাটন করায় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থানার এসআই কাজী আবুল খায়ের কে পুরস্কার হিসেবে নগদ অর্থ ও ক্রেষ্ট প্রদান করেছে জেলা পুলিশ।
শনিবার (৬ জুন) দিনব্যাপী জেলা পুলিশের মাসিক কল্যাণ সভায় মামলা তদন্তে অবদান রাখায় পুলিশ সুপার মোঃ হাসানুজ্জামান তাকে নিজ হাতে নগদ ১০ হাজার টাকা ও সম্মাননা হিসেবে ক্রেষ্ট তুলে দেন।
থানা পুলিশ জানায়, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয় উপজেলার ত্রিলোচনপুর গ্রামের সামাউল ম-লের মেয়ে কেয়া খাতুন (১৬)। নিখোঁজের ১৭ দিন পর গত ১৩ মার্চ দাদাপুর গ্রামের একটি কলাবাগান থেকে কেয়ার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে। তার পরিহিত পোশাক ও সেন্ডেল দেখে কেয়ার লাশ বলে সনাক্ত করে তার পিতা। এ ঘটনায় কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়।
ক্লুলেস এ মামলাটির তদন্ত করেন কালীগঞ্জ থানার এসআই কাজী আবুল খায়ের। করোনার মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার করতে প্রযুুক্তিগত সহায়ত, বিশ্বস্ত গুপ্তর নিয়োগ ও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারন করে মামলার তদন্তকারী কর্মকতা চুয়াডাঙ্গার জেলার জীবননগর, ঢাকা ও কালীগঞ্জ থেকে মামলার প্রকৃত তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেন। গত ১৬ মার্চ চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগন উপজেলার হাসাদাহ এলাকা থেকে মিলন নামের একজনকে আটক করা হয়। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে মিলন হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। পরে সে আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী প্রদান করে এবং তার সাথে ইসরাফিল ও আজিম জড়িত এমন তথ্য প্রদান করে। মিলন গ্রেফতার হওয়ার পর আসামী ইসরাফিল ও আজিম গা ঢাকা দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করতে থাকে। পরে ই¯্রাফিলকে ঢাকা থেকে এবং আজিম কে কালীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারাও হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদান করে। গ্রেপ্তারকৃত তিন আসামির বাড়ি ত্রিলোচনপুর গ্রামে।
তদন্তকারী কর্মকর্তা কাজী আবুল খায়ের জানান, ক্লুলেস মামলাটি তদন্ত করতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করে আসামিদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। অনুভুতি প্রকাশ করে তিনি জানান, ভাল কাজের যথাযথ মূল্যায় করায় আমি খুব খুশি। এ ধরনের মূল্যায়ন আগামিতে কর্মস্পৃহা আরো বৃদ্ধি পাবে। এজন্য তিনি পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিলু মিয়া বিশ্বাস, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার ও কালীগঞ্জ থানার ওসি মুহাঃ মাহফুজুর রহমানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) মুহাঃ মাহফুজুর রহমান মিয়া বলেন, মামলা তদন্তসহ আসামি গ্রেপ্তার, মাদক উদ্ধারসহ সাহসিকতায় অবদান রাখায় প্রতিমাসে পুলিশের কল্যাণ সভায় পুরস্কার প্রদান করা হয়। ক্লুলেস মামলার আসামি গ্রেপ্তারে অবদান রাখায় এসআই কাজী আবুল খায়েরকে পুরস্কার হিসেবে জেলা পুলিশ নগদ ১০ হাজার টাকা ও সম্মাননা স্বারক হিসেবে ক্রেষ্ট প্রদান করেছে।
উল্লেখ্য, মামলা তদন্তে অভিজ্ঞ এ পুলিশ কর্মকর্তা ২০১৯ সালে উপজেলার বড় বাইশ্যা গ্রামের আনিচুর রহমানের স্ত্রী শিউলি খাতুনের ক্লুলেস হত্যা মামলা মামলার প্রকৃত আসামি হিসেবে তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করেন। সে সময় তাকে শ্রেষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নগদ অর্থ ও ক্রেষ্ট প্রদান করা হয়। এছাড়া খুলনা পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে আইন প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে শ্রেষ্ট আইন প্রশিক্ষক হিসেবে একাধিকবার তিনি পুরস্কৃত হন।