হাকিকুল ইসলাম খোকন ও এমডি আল মাসুম খান, বাপসনিউজঃ
যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া বহিরাগত বা অননুমোদিত অভিবাসী দম্পতির শিশুদের নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার নিয়ে দায়ের করা আলোচিত মামলার যুক্তি শুনতে সম্মত হয়েছে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত—সুপ্রিম কোর্ট।
চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম দিনেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে ঘোষণা দেন—অবৈধ ভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বা অস্থায়ী ভিসাধারী বাবা–মায়ের সন্তানদের “জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব” (Birthright Citizenship) আর দেওয়া হবে না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক নিম্ন আদালত আদেশটিকে স্থগিত করে দেয়।
সুপ্রিম কোর্টে শুনানির তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। মামলার রায় পেতে আরও কয়েক মাস সময় লাগতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আদালতের এই সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।
১৬০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী বলছে—কূটনীতিবিদ ও বিদেশি সেনা সদস্যদের সন্তান বাদে, যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে জন্মগ্রহণকারী যে কেউ স্বয়ংক্রিয়ভাবে আমেরিকান নাগরিক।
কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, এই সংশোধনী কেবলমাত্র সে সব ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যাদের বাবা–মা আইনগত ভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। সুতরাং অবৈধভাবে থাকা বা অস্থায়ী ভিসায় অবস্থান করা ব্যক্তিদের সন্তানদের নাগরিকত্ব পাওয়া উচিত নয়।
আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের (ACLU) জাতীয় আইনি পরিচালক সিসিলিয়া ওয়াং বলেন—
“কোনও প্রেসিডেন্টই ১৪তম সংশোধনীর জন্মগত নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা পরিবর্তন করতে পারেন না। এটি মার্কিন আইনের ১৫০ বছরের ঐতিহ্য। আমরা সুপ্রিম কোর্টে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছি।”
ট্রাম্পের আদেশ ঘোষণার পর একাধিক ফেডারেল আদালত একে “সংবিধানবিরোধী” ঘোষণা করে। দুইটি ফেডারেল সার্কিট কোর্টেও আদেশটির বিরুদ্ধে দেওয়া নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকে।
পরে ট্রাম্প প্রশাসন সুপ্রিম কোর্টে আপিল করলে আদালত জানায়—নিম্ন আদালত গুলোর নিষেধাজ্ঞা তাদের এখতিয়ার ছাড়িয়ে গেছে। তবে জন্মগত নাগরিকত্ব বাতিলের বৈধতা সম্পর্কে তখন কোনও মন্তব্য করেনি।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী—
২০১৬ সালে অননুমোদিত অভিবাসী বাবা–মায়ের প্রায় ২.৫ লাখ সন্তান যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেয়।
২০২২ সালে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ১২ লাখে।
মে মাসে মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউট ও পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় বলা হয়—জন্মগত নাগরিকত্ব বাতিল হলে:
২০৪৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অননুমোদিত জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে ২৭ লাখ,
এবং ২০৭৫ সালের মধ্যে তা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৫৪ লাখে।
বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৩০টি দেশ, যার বেশিরভাগই আমেরিকা মহাদেশে, জন্মস্থানসূত্রে স্বয়ংক্রিয় নাগরিকত্ব দিয়ে থাকে।
এই মামলার রায় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ব্যবস্থা ও অভিবাসন নীতিতে ঐতিহাসিক পরিবর্তন আনতে পারে। পাশাপাশি এটি ট্রাম্পের অভিবাসন সংস্কারের বৃহত্তর নীতিকাঠামোর দিকনির্দেশনাও নির্ধারণ করবে।