বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:২৭ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ :
শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ কাপ্তাইয়ের দুর্গম ভাল্লুকিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নব নির্মিত ভবনের শুভ উদ্বোধন  কাউখালীতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস পালিত কাপ্তাই বিজিবি বিপুল পরিমাণ বিদেশী সিগারেট আটক করে সীমান্তে আর একটি মানুষও হত্যা করা যাবে না -মোঃ মোস্তফা আল ইহযায” জন্মস্থান সূত্রে নাগরিকত্ব মামলার যুক্তি শুনতে রাজি সর্বোচ্চ মার্কিন আদালত যুক্তরাষ্ট্রে বিমানবন্দরে যাত্রীদের পোশাক নিয়ে নতুন বিতর্ক মামদানির ক্ষুদ্র ব্যবসা ও এমডাব্লিউবিই কমিটিতে শাহরিয়ার রহমান আনডকুমেন্টেড ইমিগ্র্যান্টদের বিমানযাত্রা পরিহারের পরামর্শ মাদারীপুর মুক্ত দিবস আজ

স্ক্রিন প্রিন্ট শিখে স্বনির্ভর হোন–ফারজানা শারমিন

  • আপডেট এর সময় বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৮১ বার পঠিত হয়েছে
Oplus_131072

ফারজানা শারমিন:

যেসব মানুষ বেকারত্ব দুর করে স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে সাবলম্বী হতে চান বা স্বনির্ভর হতে চান তারা স্ক্রিনপ্রিন্ট শিখে সাবলম্বী হতে পারেন।

ঘরে বসে মহিলারা ও স্ক্রিনপ্রিন্টের সামগ্রী ক্রয় করে, স্ক্রিনপ্রিন্টের ব্যবসা করে সাবলম্বী হতে পারেন। কারণ স্ক্রিনপ্রিন্ট ও ব্লকপ্রিন্ট, বাটিক টাই ডাইয়ের মত কাপড়
ছাপানোর একটি প্রাচীন এবং জনপ্রিয় পদ্ধতি । বর্তমানে ও স্ক্রিনপ্রিন্টের জনপ্রিয়তার কোন কমতি নেই । ভবিষ্যতেও এর জনপ্রিয়তা কখনই কমবেনা।শুধু
কাপড়ে প্রিন্ট করার কাজেই নয় ,কাগজ, ব্রোশিয়ার, ব্যাজ , সিরামিকসের মগ, প্লেট, টিস্যু ব্যাগে, গ্লাস,শোপিসে কোন কিছু ছাপানোর জন্য ও স্ক্রিনপ্রিন্ট
করা যায়।

স্ক্রিনপ্রিন্টের জন্য যেসব সামগ্রী লাগবে :

স্ক্রিনপ্রিন্টের জন্য লাগবে কাঠ বা এ্যালুমিনিয়ামের ফ্রেম, স্ক্রিন গ্লাস, ম্যাশ কাপড়, ট্রেসিং পেপার, রাবার , নিউটেক্স, অক্সেল, ছোট সিলিন্ডার , ইন্ক
রিডিউসার, পীড়া, কব্জা, কালি,পেরেক, ব্রাশ, বাইন্ডার, নাইলন পিকচার, সিসিএল, এনকে ফান্ডার, এম ৫০, প্লাষ্টিক ডিজাইন সেট, রেডি টেবিল,
বিভিন্ন কালারের তরল রং, ডায়ার যন্ত্র । এক্ষেত্রে ব্রোশিয়ার, ব্যাজ , মগ,গ্লাস প্লেটে স্ক্রিনপ্রিন্টের জন্য আলাদা স্ক্রিনপ্রিন্ট ডিভাইস ও ব্যবহার করা যায় ।

যেভাবে স্ক্রিনপ্রিন্ট করতে হবে:

প্রিন্টিংয়ের আকার ও মাপ অনুযায়ী স্ক্রিন্ট প্রিন্টিংয়ের জন্য চারকোনা ফ্রেমে কাপড়ের মত দেখতে স্ক্রিনটিকে টানটান করে সমানভাবে লাগিয়ে রাখতে
হবে। যে রং ব্যবহার করা হবে রংকে ইংক রিডিউসার দিয়ে পাতলা করে নিতে হবে, দীর্ঘক্ষণ নাড়া চাড়া করে । এরপর রং ফ্রেমে ঢেলে নিতে হবে।
এরপরে ড্রায়ারের মাধ্যমে শুকিয়ে নিতে হবে। অন্ধকারে শুকাতে হবে। কাঠের বড় পিড়ির উপর স্ক্রিন প্রিন্টের মাপ অনুযায়ী ফোম রেখে নিতে হবে।
এর উপর রং করা ম্যাশ কাপড়ের ফ্রেমটি রাখতে হবে। বিশেষ ডিজাইন করা ট্রেসিং পেপার উল্টিয়ে দিয়ে কসটেপ দিয়ে আটকিয়ে দিতে হবে। এর উপর
গ্লাস বসিয়ে দিতে হবে। দুটো ক্লাম দয়ে আটকে দিতে হবে। স্ক্রিন উঠানোর জন্য ক্যামেরা বসানো যায় । অথবা আরো সহজতম উপায়ে স্ক্রিন উঠানোর
জন্য লাইটার ভালভ দিয়ে ২ মিনিট হিট দিতে হবে। কাঁচটি গরম হয়ে উঠলে ক্লামগুলো খুলে ট্রেসিং পেপারগুলো তুলে রং লাগানো ফ্রেমগুলো স্বাভাবিক
পানি দিয়ে ধুতে হবে।পরে স্প্রে গ্যালনে স্বাভাবিক পানি ভরে স্প্রে করতে হবে। এতে স্ক্রিনটি পরিস্কার ভাবে বোঝা যাবে। এরপরে শুকনো ভাল কাপড় দিয়ে
পানি মুছতে হবে আস্তে আস্তে। এভাবে বিয়ের কার্ড , কাগজ, কাপড় , মগ , প্লেটে খুব সহজে স্ক্রিনপ্রিন্ট করা যায়। ডিজাইন ও রুচি অনুযায়ী রং ভিন্ন
ভিন্ন হবে।

কোথায় পাওয়া যাবে স্ক্রিনপ্রিন্টের সামগ্রী :

পুরোনো ঢাকার নবাবপুর, কাঁটাবন, আজিজ সুপার মার্কেট ,মিরপুর, নিউমার্কেট, পুরানা পল্টন, ইসলামপুর,লোকাল হার্ডওয়্যার ও ক্যামিক্যালের দোকান
,স্ক্রি প্রিন্টিং প্রশিক্ষণ দেয় এমন প্রশিক্ষন কেন্দ্র , ক্রেতাদেরকে স্ক্রিন প্রিন্টিং সেবা দেয় এরকম বিভিন্ন দোকান , অনলাইনে স্ক্রিনপ্রিন্ট সামগ্রী বিক্রি করে
এমন প্রতিষ্ঠানে অনলাইন অর্ডার দিয়ে ও স্ক্রিনপ্রিন্ট সামগ্রী ঘরে বসে ক্রয় করা যাবে।

স্ক্রিন প্রিন্ট প্রশিক্ষণ।

হাতে কলমে দক্ষ কারো কাছ থেকে স্ক্রিন প্রিন্টের কাজ শিখে নিলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। স্ক্রিন প্রিন্টের উপকরন সামগ্রী সহ বিভিন্ন সামগ্রী যারা
বিক্রি করে তাদের কাছ থেকেও হাতে কলমে (ফ্রি ভাবে অথবা কিছু টাকা দিয়ে) স্ক্রিনপ্রিন্টের কাজ শিখে নিলে এই ব্যবসায় অনেক ভাল করা যাবে।
কোন ভালো সরকারী -বেসরকারী প্রতিষ্ঠান হতে স্ক্রিনপ্রিন্ট শিখে, স্ক্রিনপ্রিন্টের বিজনেস শুরু করলে ভাল করার সম্ভাবনা বেশি । বাংলাদেশ ক্ষুদ্রও কুটির
শিল্প প্রতিষ্ঠান (বিসিক) , আল ইসলাম জহুরী‌‍য়া কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র , জয়িতা ফাউন্ডেশন, স্ক্রিন প্রিন্ট ও প্রশিক্ষণ সেবা সহ বিভিন্ন অনলাইন অফলাইন
সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান হতে স্ক্রিনপ্রিন্ট শিখতে পারেন । এক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ ফি বাবদ খরচ লাগতে পারে ১০০০-৩০০০ টাকা।

স্ক্রিনপ্রিন্টের ব্যবসায় খরচ এবং মুনাফা।

স্ক্রিনপ্রিন্টের জন্য পাইকারী রেটে এক কালারের প্রতিটি গ্যাঞ্জি,টি শার্টের দাম ১০০ -১৩০ টাকা , টিস্যু ব্যাগের পাইকারী দাম ৩ টাকা – ৮ টাকায় ,
শিশুদের ফ্রক,
গ্যাঞ্জি সেট সালোয়ার কামিজ, পাঞ্জাবি, শাড়ির জন্য এক কালারের কাপড় কিনতে পারেন যার দাম প্রতি গজ ৮০- ১২০ টাকা হতে পারে।ব্যানারের জন্য পাইকারী দরে
প্রতি গজ কাপড় ১৮-২৫ টাকায় কিনতে পারেন।বিভিন্ন কালারের মগ পাইকারী হারে কিনতে ৪৫-৬০ টাকা খরচ হবে একটি মগের জন্য । পাইকারি হারে সিরামিকস বাটি
কিনতে ৫০-১৫০ টাকা লাগতে পারে ।

এক্ষেত্রে প্রতি মাসে বিভিন্ন কালারের গ্যাঞ্জি,টি শার্ট বিক্রি করে ৩০০-৫০০ টাকা ইনকাম করতে পারবে । শাড়ি , সালোয়ার কামিজ বিক্রি করে ২৫০ -১৫০০ টাকা মুনাফা
করতে পারবে । পাঞ্জাবি বিক্রি করে ২৫০- ১০০০ টাকা মুনাফা করতে পারবে । স্ক্রিনপ্রিন্টকৃত ব্যানার বিক্রি করে ৪০০-৬০০ টাকা মুনাফা করতে
পরেবে। স্ক্রিনপ্রিন্টকৃত মগ , প্লেট বিক্রি করে ৯০-৫০০ টাকা মুনাফা করতে পারে।

স্ক্রিনপ্রিন্টের পরে বাজারে নতুন বিক্রেতা হিসেবে বাজার ধরে রাখতে জামা কাপড়, মগ, বাটি সহ সব পন্যের দাম অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত অনলাইন বিক্রেতাদের সমপর্যায়ে
অথবা কম রাখতে হবে। অস্বাভাবিক মুনাফা করার জন্য অনলাইন ক্রেতাদের কাছ হতে বেশি দাম চাওয়া যাবেনা। বরং ক্রেতা ধরে রাখতে বিক্রিত অনলাইন পন্যের সাথে কিছু গিফট রাখা যেতে পারে যেমন -চাবির রিং, কলম ইত্যাদি । তবে স্ক্রিনপ্রিন্ট কৃত পণ্যের মান খুব ভাল করার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। নইলে অনলাইন স্ক্রিনট্রিন্ট ব্যবসায় খুব উন্নতি করা যাবেনা।

নবাবপুরে অবস্থিত এম এম এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী নজরুল ঘরে বসে স্ক্রিনপ্রিন্ট ব্যবসা প্রসঙ্গে বলেন- আপনারা স্ক্রিনপ্রিন্ট শিখে অনলাইনে
স্ক্রিনপ্রিন্টের পন্য বিক্রির পাশাপাশি স্থানীয় স্ক্রিনপ্রিন্টের পন্য যেসব দোকানে বিক্রি হয় সেসব দোকানে কথা বলে পাইকারী দরে বিক্রি করে আয় করতে
পারেন। ক্রেতারা যখন স্ক্রিনপ্রিন্টের কাজের অর্ডার দেয় তখন একটা দুটো কাজের অর্ডার কম দেয় ,বেশির ভাগ সময় পাইকারী রেটে বেশি পন্যের
অর্ডার দেয় । এক্ষেত্রে পন্য ক্রয় করে দিয়ে যদি আপনাকে শুধু স্ক্রিনপ্রিন্ট করার জন্য অর্ডার দেয় পণ্যের আকার অনুযায়ী প্রতি পন্যের জন্য ৩০
টাকা করে রাখবেন।

কিরকম মাসিক মুনাফা হতে পারে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন – স্ক্রিনপ্রিন্ট ব্যবসায় মাসে ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার
টাকা ইনকাম করা সম্ভব। এক্ষেত্রে ২০ হাজার হতে ৪০ হাজার মুনাফা হতে পারে।

সংবাদটি আপনার স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো সংবাদ